বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

উদ্বোধনের আগেই বেকুটিয়া সেতু পার হলো বরযাত্রীবাহী গাড়ি

উদ্বোধনের আগেই বেকুটিয়া সেতু পার হলো বরযাত্রীবাহী গাড়ি

0 Shares

পিরোজপুর প্রতিনিধি:
পিরোজপুরের কঁচা নদীর ওপর বেকুটিয়া গ্রামে নির্মিত অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাসে অর্থাৎ জুনে সেতুটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। এর আগেই সেতু দিয়ে বরযাত্রীবাহী দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও একটি বাস চলাচলের অভিযোগ উঠেছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে একটি বিয়ের বরযাত্রীদের গাড়ি সেতু পার হওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

২ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, সেতুর পূর্ব প্রান্ত কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া থেকে বরযাত্রীবাহী দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও একটি বাস সেতু পার হয়ে পিরোজপুরের পশ্চিম প্রান্তে চলে যাচ্ছে। সেখানে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার পর সেতুর ওপর থাকা ব্যারিকেড সরিয়ে বরযাত্রীরা চলে যান। তখন সাধারণ মানুষরা বিষয়টি দেখে অবাক হন এবং কয়েকজন ভিডিও করেন মোবাইল ফোনে।

ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘এ গাড়ি উঠে এলো ক্যামনে?’ আরেকজন বলছেন, ‘ও পাশ খোলা মনে হয়। ‘ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়।

সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী পিরোজপুর পৌর এলাকার হাসিবুল আজাদ বলেন, ঈদের ছুটিতে ঘুরতে গেছিলাম বন্ধুরা মিলে। তখনই দেখছিলাম নিয়ম-কানুন শুধু সাধারণ মানুষের জন্য। একটু ছবি তুলতেই পারিনি। কিছু লোক অনায়াসে বাইক নিয়ে, গাড়ি নিয়ে সেতু পার হয়। তারা সবাই ক্ষমতাশালী।

সেতু এলাকার কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বরযাত্রীবাহী গাড়ি ও বাস সেতু পার হয়েছে কোনো ঝামেলা ছাড়াই। তাদেরকে তেমন কিছু বলা হয়নি। সেতুর দুই প্রান্তে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের চৌকি রয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে গাড়িগুলো সেতু পার হয়।

পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমিরমারা গ্রামের সেতু এলাকার বাসিন্দা ও শারিকতলা ডুমুরিতলার ইউপি চেয়ারম্যান আজমির হোসেন মাঝি বলেন, শুনেছি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয়ে এক ব্যক্তি বরযাত্রীর গাড়ি পার হওয়ার জন্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বলেন। তারা এ পরিচয় পেয়ে গাড়ি সেতুতে উঠতে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন বলেন, গতকাল বিকেলে তিনি ঘটনাটি শুনে সেতু এলাকায় গিয়ে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে জানতে চেয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীদের কে যেন ফোন দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখছেন।

সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহামুদ বলেন, সেতুটি চীন সরকার এখনো সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেনি। তবে বিষয়টি শুনে তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন যেন সেতুতে না ওঠে।
জানা যায়, বরিশাল-খুলনা পথে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা তৈরির জন্য পিরোজপুরের কঁচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ৯৯৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ৮৮৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা চীন সরকার দিয়েছে, বাকি টাকা ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার। অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ১৭ ব্যুরো গ্রুপ লিমিটেড বাস্তবায়ন করেছে। ইতিমধ্যে সেতুর ৯৫ ভাগ কাজ শেষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চীন সরকারের প্রতিনিধিদল সেতুর কাজ বুঝে নিচ্ছে। আগামী ২০ জুনের মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে সেতুটি হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। এরপর উদ্বোধন করা হবে।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap